হনুমান জয়ন্তী একটি পবিত্র হিন্দু উৎসব, যা ভক্তদের জন্য চরম শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে পালন করা হয়। এই দিনে আমরা ঘরে ঘরে হনুমানজীর আশীর্বাদ লাভের আশায় ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করি। তাই ঘরের সাজসজ্জা যেনো এই দিনের পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতাকে ফুটিয়ে তোলে—সেই উদ্দেশ্যে আমরা আজ দিচ্ছি কিছু বিশেষ ও কার্যকর সাজসজ্জার পরামর্শ, যা আপনাকে সাহায্য করবে ঘরকে আরও পবিত্র, শান্তিপূর্ণ এবং মনোমুগ্ধকর করে তুলতে।

পবিত্র ঘর তৈরির জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি
হনুমান জয়ন্তীর আগে ঘরের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পবিত্র দিনে দেবতা হনুমানের উপস্থিতি অনুভব করতে চাইলে, ঘরকে হতে হবে নীরব, শুদ্ধ এবং সুন্দর।
- ধুলাবালি মুক্ত ঘর: জানালা, দরজা, মেঝে এবং কোণাগুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
- গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধিকরণ: প্রতিটি ঘরে গঙ্গাজল ছিটিয়ে ঘরকে আধ্যাত্মিকভাবে শুদ্ধ করুন।
- প্রদীপ ও ধূপ প্রজ্জ্বলন: প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ঘরে ঘিয়ের প্রদীপ এবং ধূপ জ্বালিয়ে দিন শুরু করুন।
হনুমানজীর আরাধনার জন্য মন্দির বা পুজো স্থান সাজানো
ঘরের এক কোনায় একটি পবিত্র পুজোস্থান তৈরি করুন বা পুরনো পুজোস্থল নতুনভাবে সাজান। হনুমানজীর প্রতিমা বা চিত্র এখানে স্থাপন করুন।
- লাল বা গেরুয়া কাপড় ব্যবহার করুন: হনুমানজী লাল রঙ পছন্দ করেন, তাই পুজোস্থান লাল কাপড়ে সাজান।
- তুলসী পাতা ও সিঁদুর: তুলসী পাতা ও সিঁদুর দিয়ে হনুমানজীর চরণ পূজা করুন এবং এগুলো পুজোস্থলে রাখুন।
- গোলাপ ও চন্দ্রমল্লিকা ফুল ব্যবহার করুন: ফুলের মালা ও পাঁপড়ি দিয়ে অর্ঘ্য দিন।
পবিত্র ফুলের সাহায্যে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
ফুল হল ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক। এই দিনে ঘরের প্রতিটি অংশ ফুল দিয়ে সাজানো অত্যন্ত শুভ।
- তোরা ও মালা তৈরি করুন: দরজার উপরে ও জানালায় তোরা বা ফুলের মালা ঝুলিয়ে দিন।
- ফুলের রং বাছাই করুন: লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফুল হনুমানজীর পছন্দসই। এগুলোই ব্যবহার করুন।
- ফুলের রাঙ্গোলি: মেঝেতে রাঙ্গোলি তৈরি করতে পারেন পাঁপড়ি দিয়ে।
আলোকসজ্জা ও দীপমালার ব্যবহার
হনুমানজয়ন্তীতে আলো একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। আলো মানেই আত্মিক শক্তির প্রতীক এবং এটি ঘরে পজিটিভ এনার্জি আনতে সহায়ক।
- ডিআইওয়াই মাটির প্রদীপ ব্যবহার করুন: ঘরে নিজ হাতে তৈরি করা মাটির প্রদীপ জ্বালালে শুভফল পাওয়া যায়।
- ফেয়ারী লাইট বা লাল এলইডি লাইট ব্যবহার করুন: জানালা বা পুজোস্থানে ছোট ছোট লাইটে আলোকিত করুন।
- রাতভর প্রদীপ জ্বালানো: হনুমানজীর প্রতি ভক্তি দেখানোর জন্য সারা রাত একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে পারেন।
হনুমান থিমের আর্ট ও ক্রাফট সাজসজ্জা
ঘরকে আরো আধ্যাত্মিক ও আকর্ষণীয় করে তুলতে DIY আর্ট ও হস্তশিল্পের ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর।
- হনুমানজীর মুখাবয়ব অঙ্কন বা প্রিন্ট করা ছবি: এগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেয়ালে টাঙাতে পারেন।
- পেপার ল্যাম্প ও ঝুলন্ত দোলনা: লাল ও গেরুয়া রঙের কাগজ দিয়ে তৈরি ঝাড়বাতি ঘরকে উৎসবমুখর করে তোলে।
- বাচ্চাদের তৈরি করা হনুমানজীর ছবি: শিশুরা এই বিশেষ দিনে নিজের হাতে কিছু বানালে তা ঘরে এক অন্যরকম ভালোলাগা এনে দেবে।
হনুমান চালিশা ও ভক্তিগীতি বাজানোর ব্যবস্থা
ঘরের পবিত্রতা বাড়াতে শুধু সাজসজ্জাই নয়, আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি করাও জরুরি। তাই দিনভর হনুমান চালিশা বা ভজন বাজানোর ব্যবস্থা করুন।
- স্পিকারে বা মোবাইলে চালান ভজন: সকালের ঘন্টা বাজনার সাথে একটি সূর্যোদয় ভজন ঘরের পরিবেশ বদলে দিতে পারে।
- পুজোর সময় গ্রুপ চ্যান্তিং: পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসাথে হনুমান চালিশা পাঠ করলে তার প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়।
প্রসাদ ও নৈবেদ্যের আয়োজন
হনুমানজীর প্রিয় কিছু পদ ঘরে তৈরি করে সাজিয়ে রাখুন। এটি ঘরের পূণ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি সৌন্দর্যেও আনবে বৈচিত্র্য।
- লাড্ডু, বনানা, দই, গুড়, এবং চাল: এগুলোই হনুমানজীর প্রিয় প্রসাদ, তাই পিতলের থালায় সুন্দরভাবে সাজিয়ে পুজোস্থানে রাখুন।
- আঁচে রাঁধা দেশীয় খাবার: ঘরে তৈরি বিশুদ্ধ খাবার ঈশ্বরের কাছে অর্ঘ্য হিসেবে প্রেরণ করুন।
তুলসী গাছের উপস্থিতি
ঘরে তুলসী গাছ থাকলে সেটি হনুমানজীর আশীর্বাদ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি তুলসী গাছ বা গামলায় বসানো তুলসী রাখুন।
- প্রতিদিন জল দিন ও দীপ জ্বালান: সন্ধ্যায় তুলসীর সামনে দীপ জ্বালালে ঘরের পবিত্রতা বজায় থাকে।
- তুলসীর চারপাশে ফুল দিয়ে সাজান: পবিত্রতা ও শোভা বাড়ে।
শান্তিপূর্ণ ধ্যানের ব্যবস্থা করুন
হনুমানজয়ন্তীর দিনে নিজেকে শান্ত করার জন্য একটি নিরিবিলি ধ্যানের জায়গা তৈরি করুন।
- যোগাসন মাদুর পেতে বসার জায়গা রাখুন
- আরোমা ক্যান্ডেল ও মৃদু আলো ব্যবহার করুন
- ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজুক শান্ত সঙ্গীত

হনুমান জয়ন্তীর সাজসজ্জা মানেই আত্মিক ও নান্দনিক অভিব্যক্তি
ঘর সাজানোর মূল উদ্দেশ্য কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং ঘরে ভক্তি, পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করা। এই বিশেষ দিনে ঘরের প্রতিটি কোণ যেন হনুমানজীর আশীর্বাদে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, সেটিই আমাদের কাম্য।